যা কবিতা তাই কুঠার
যার নাম বাসা
সেই ভাসা, ভেসে যাওয়া...
এমন এক সুন্দর লাইন পড়ার পর সকলেরই ইচ্ছে করবে কবিতার স্রোতে ভাসতে । সেই অমোঘ ভাসা নিয়েই এগিয়ে গেলাম পরের কবিতায়।
কাব্যগ্রন্থের নাম "নৈরমনি বালি"। লিখেছেন দয়াময় মাহান্তী।
দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় চোখে পড়ে কবির দার্শনিক চিন্তার এক ঝলক ছবি-
"খোকার এনামেলের স্টিমারের মতো পাতিহাঁস এগোচ্ছে
পুকুরের জলে ত্রিভুজাকৃতি মৃদু ঢেউ তুলে..."
যেখানে বোঝা যায় কবির সাথে গ্রামের টান বড়োই মায়াময়। সাথে বাংলাভাষার মিষ্টতা গুন বর্ণনা করতেও কবি ভোলেননি
"আমাদের বাংলাভাষায় সবচেয়ে বেশি ঋতু।
আমার বাংলাভাষার ভিতরে তুমি
তাই এত বিচিত্র
. শিখা সম্পন্ন
. এত বেশি দোদুল্যমান..."
গ্রন্থটির পাতায় পাতায় মাটির টান মাটির গন্ধ ।কবি একাত্ম হয়ে গেছেন এই বিশ্ব প্রকৃতির সঙ্গে।একাত্ম অনুভব করে লিখেছেন "রোদ বৃষ্টির খেলা" , "চাঁদের ছবি" রামধনুর লাজুকতায়।
জন্মান্তরে বিশ্বাসী তিনি বলেছেন
" এই জন্মেও একবার বাজাবো বাঁশি"
যেখানের কবির পূর্ব জন্ম ও পরবর্তী জন্মের এক অদ্ভুত বর্ণনার আস্বাদ পেলাম।
"সভ্যতা বাছে হরেক কিসিম পোশাক
রাস্তা বদলে যায়
তোমার আসা যাওয়ায়"
যেখানে আপাত শ্লেষ বাক্যের ব্যবহার কবিতাটিতে আলাদা মাধুর্য এনেছে ।কবি তার মানস প্রেমিকার সাথে একাত্ম হওয়ার গেছেন।একাকার করেছেন নিজেকে এই বিশ্ব প্রকৃতির সাথে।
"আত্মীয়ের হাতের মাটির মতো সময়
ঢেকে দেবে আমার সাড়ে তিন হাত
শরীরের লক্ষ কোটি, প্রতিটি রোম ছিদ্র"
নিকট আত্মীয়ের প্রতি গভীর ভালোবাসা । তিনি নিজে যদি কখনও এই পৃথিবীতে না থাকেন তবুও তাঁর নিকট আত্মীয়ের সুখে বাঁচার যে প্রার্থনা করেছেন তা স্পষ্ট। "লাল টেনিস বল" কবিতার আড়ালে লুকিয়ে আছে তাঁর বাসনা
" ঘামে ভিজে উঠলো আমার ট্রাউজার
বালুভূমে সেই বল নিয়ে লোফালুফি করতে করতে
একদিন অসাবধানে গেল ভেসে সমুদ্রে , অতলে
মধ্য যৌবনে সেই লাল টেনিস বল ভেসে উঠল
আবার আমার হাতে ।"
"অনেক বেশি কাঁদার জন্য
কোনো কিছু না করেও তবুও এই নেমে যাচ্ছি
আবার সেই এতটা রাস্তা"
গ্রন্থটির প্রথম প্রকাশকাল ২০১৪ সাল ।যেটা না বললে অপূর্ন থাকে তা হলো স্বরূপ চক্রবর্তী কৃত সুন্দর প্রচ্ছদ বইটির ভার রক্ষা করেছে।
No comments:
Post a Comment